ইয়াবার অর্থ হুন্ডি হচ্ছে দুবাই থাইল্যান্ড সিঙ্গাপুরে

আবুল খায়ের •

সীমান্তে মাদক চোরাচালানিদের কোনোভাবেই ঠেকানো যাচ্ছে না। বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক প্রতিদিনই নানা ধরনের মাদকদ্রব্য উদ্ধার হলেও এর সঙ্গে জড়িতরা থেকে যাচ্ছে আড়ালে। মাঝে মধ্যে চোরাকারবারিরা বিভিন্ন বাহিনীর হাতে ক্রসফায়ারের শিকার হলেও থেমে নেই এই অনৈতিক কাজ।

মূলত অধিক মুনাফার আশায় প্রতিদিনই এ কারবারের সঙ্গে নতুন নতুন মুখ যোগ হচ্ছে।

এদিকে, সীমান্ত সংলগ্ন প্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বললে তারা জানান, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একশ্রেণীর অসাধু কর্মকর্তা এবং স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সহায়তায় মাদক চোরাচালান হরহামেশাই ঘটছে। সড়কপথ, নৌপথ ও আকাশপথে দেদার ঢুকছে মাদক।

বিভিন্ন তথ্যসূত্র থেকে যে তথ্যগুলো পেয়েছে তাতে দেখা যায়, ইয়াবা পাচারকারিরা এখন তাদের কৌশল পালটেছে। দুবাই, সিংগাপুর, থাইল্যান্ডসহ কয়েকটি দেশ থেকে মাদকের গডফাদাররা হুন্ডির মাধ্যমে ইয়াবা উৎপাদনকারীদের কাছে অর্থ প্রেরণ করে। অর্থপ্রাপ্তি নিশ্চিতের পর মিয়ানমারের উৎপাদনকারীরা নির্দিষ্ট ইয়াবার চালান সীমান্তে পাঠিয়ে দেয়। সেখান থেকে এটি ছড়িয়ে পড়ে সারা দেশে। মূলত মিয়ানমার থেকে এখন দুটি রুটে ইয়াবার চালান আসছে।

এর একটি হচ্ছে সমুদ্রপথে মিয়ানমার থেকে কুয়াকাটা এবং ভারতের মিজোরাম সীমান্ত। টেকনাফ সীমান্ত এবং বঙ্গোপসাগরে কড়াকড়ি হলে ইয়াবা ব্যবসায়ীরা পার্বত্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন সীমান্ত এলাকা বেছে নেয়। আর এসবের তদারকি হয় চট্টগ্রাম শহরে বসে। বর্তমানে মোট ২২ জন গড়ফাদার এ হুন্ডি ব্যবসার সঙ্গে জড়িত বলে জানা গেছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে, বর্তমানে টেকনাফ এবং উখিয়ার সাতটি পয়েন্ট দিয়ে বাংলাদেশে ইয়াবার চালান সবচেয়ে বেশি ঢুকছে। এগুলো হচ্ছে—সাবরাং, জালিয়াপাড়া, নাজিরাপাড়া, নাফ নদের এক নম্বর স্লুইসগেট, নাইটংপাড়া ও জাজিমুরা।

এসব ইয়াবা সাধারণত সমুদ্রপথে বিভিন্ন উপকূলীয় জেলায় পৌঁছে যাচ্ছে। বরিশাল হয়ে এসব চালান পিরোজপুর, পটুয়াখালী, কুয়াকাটা ও খুলনা পর্যন্ত যাচ্ছে। এ কাজে অধিকাংশ সময় মাছ ধরার ট্রলার এবং ফিডার জাহাজ ব্যবহার করা হচ্ছে।

এদিকে, সাম্প্রতিককালে টেকনাফ সীমান্তে কিছুটা কড়াকড়ির কারণে ইয়াবা কারবারিরা তাদের রুট পালটেছে। পার্বত্য চট্টগামের বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে (যেখানে বাংলাদেশের সঙ্গে মিয়ানমারের সীমান্ত আছে) এখন দেদার বাংলাদেশে ইয়াবা ঢুকছে। যেখানে বাংলাদেশের সঙ্গে সীমান্ত নেই সেসব জায়গায় কারবারিরা ইয়াবার চালান ভারতে পাঠিয়ে দেয়। সেখান থেকে নানা জায়গা ঘুরে ইয়াবার চালান বাংলাদেশে আসে।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর এক রিপোর্টে দেখা যায়, বেশ কয়েকটি রুটে এসব ইয়াবার চালান পরিবহন করছে কারবারিরা। এসব রুট হচ্ছে—ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক, চট্টগ্রাম-সাতকানিয়া-বান্দরবান মহাসড়ক, চট্টগ্রাম-রাঙ্গুনিয়া-কাপ্তাই মহাসড়ক, চট্টগ্রাম-ফটিকছড়ি-হাটহাজারী-রাঙ্গামাটি সড়ক, চট্টগ্রাম-মিরসরাই-করেরহাট-জোরারগঞ্জ-ভূজপুর-খাগড়াছড়ি সড়ক, চট্টগ্রাম-আনোয়ারা-বাঁশখালী সড়ক।

সাম্প্রতিক সময়ে মহাসড়কগুলোতে বিভিন্ন পরিবহনের বাস, প্রাইভেট কার এবং মাইক্রোবাসে তল্লাশি চালিয়ে বিপুল পরিমাণ ইয়াবার চালান উদ্ধার করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। কিছু কিছু চালান তারা উদ্ধার করলেও অধিকাংশ চালান থাকছে ধরা-ছোঁয়ার বাইরে। একটি সূত্র জানিয়েছে, ইয়াবা চোরাচালানের সঙ্গে জড়িত বড় বড় গড়ফাদাররা বিভিন্ন জায়গা ম্যানেজ করে তাদের ব্যবসা নির্বিঘ্নে চালিয়ে যাচ্ছেন।